বাংলাদেশ: দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান শক্তি
বাংলাদেশ সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্রে সীমান্তবর্তী একটি ছোট দেশ হিসেবে পরিচিত। তবে এর ভূগোল ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য দেশটিকে এ অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত করেছে। তিন দিকেই ভিন্ন দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর-এই অনন্য ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করছে।
বাংলাদেশের ১,১৮,৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা রয়েছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের চারটি প্রধান সমুদ্রবন্দর—চট্টগ্রাম, মংলা, পায়রা, এবং মাতারবাড়ি—আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে, চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বন্দর হিসেবে পরিচিত, যা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান চালিকাশক্তি।
ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সপোর্ট হাব হতে পারে। নদীমাত্রিক ভূগোলের কারণে কৃষি, মৎস্য এবং অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনে বাংলাদেশ ব্যাপক সুবিধা পাচ্ছে। প্রায় ৭০০ নদী প্রবাহিত হওয়ায় দেশের উর্বর মাটি ও সমৃদ্ধ জলজ সম্পদ কৃষি উৎপাদনকে সমৃদ্ধ করেছে। এছাড়া, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, যা বাংলাদেশের পরিবেশ ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির আরেকটি বড় হাতিয়ার হলো এর বিশাল জনশক্তি। দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, যা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। এছাড়া, তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বৈশ্বিকভাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, যেখানে চীন রয়েছে শীর্ষে।
সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার ভূগোল, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে। আগামী দিনে এই সম্ভাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা হলে, বাংলাদেশ শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।