অন্তর্বর্তী সরকার ও সংস্কার কর্মসূচিতে জাপানের পূর্ণ সমর্থন
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি জাপান তাদের জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) টোকিওতে বাংলাদেশ ও জাপানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ সমর্থনের কথা জানায় জাপানি প্রতিনিধিদল।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (পূর্ব) সচিব রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম এবং জাপানের পক্ষে ছিলেন দেশটির সিনিয়র উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও খাতভিত্তিক সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। একইসঙ্গে শুল্কমুক্ত বাজারপ্রবেশ, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি ও শিল্প খাতে সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়েও মতবিনিময় হয়।
প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর ঘিরে আলোচনা
বৈঠকে আসন্ন জাপান সফরের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কর্মসূচি ও আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়েও আলোচনা হয়। উভয় পক্ষ জুনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পঞ্চম রাউন্ড বৈঠকের পরবর্তী অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করে।
বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা ও বিনিয়োগ প্রসার
বৈঠকে মানবসম্পদ উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এবং শিপইয়ার্ড উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জাপান জানায়, তারা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
বাংলাদেশের অনুরোধে এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে জাপানের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। এছাড়া, বাংলাদেশি ফলমূল ও শাকসবজির জাপানি বাজারে প্রবেশে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
বঙ্গোপসাগরীয় উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকার আশ্বাস
বৈঠকে জাপান ‘বঙ্গোপসাগরীয় উদ্যোগ (Big-B)’ এর আওতায় উচ্চমানের অবকাঠামো প্রকল্পে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার কথা জানায়। একই সঙ্গে জাপানি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও শিল্প চেইন সম্প্রসারণে উৎসাহিত করবে বলেও জানানো হয়।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকায় জাপানের প্রশংসা
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করে জাপান জানায়, এই সংকটের দ্রুত ও নিরাপদ সমাধানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য তারা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। সেই সঙ্গে মানবিক সহায়তাও চলমান থাকবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উন্নয়ন সহায়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ, সময়সীমা বাড়ানো এবং বাজেট সহায়তার জন্য জাপানের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
এই বৈঠককে উভয় দেশ কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও গভীর করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছে।
সূত্রঃ আমার দেশ