ভারত-পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র তুলনা: শক্তি ও সক্ষমতার বিচারে

ভারত-পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিযোগিতা: সম্ভাব্য সংঘাতের ভয়াবহ চিত্র

দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই সামরিক উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে দুই দেশের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা নিয়ে চলমান প্রতিযোগিতা এবং পারস্পরিক হুমকির আবহে এই অঞ্চল যে কোনো সময় ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।

পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লায় রয়েছে ভারতের গুজরাট, রাজস্থান, পাঞ্জাব এমনকি রাজধানী নয়াদিল্লির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। একইভাবে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় রয়েছে পাকিস্তানের করাচি, লাহোর ও মুলতানসহ বেশিরভাগ বড় শহর। যদি এই উত্তেজনা কোনোভাবে সরাসরি যুদ্ধের রূপ নেয় এবং উভয় পক্ষ তাদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার শুরু করে, তাহলে ঐতিহাসিক এসব জনপদের পরিণতি ভয়াবহ হবে তা বলাই বাহুল্য।

পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার

পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে রয়েছে ক্রুজ, ট্যাকটিক্যাল ও স্বল্প-মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

  • ট্যাকটিক্যাল ক্ষেপণাস্ত্র: হাতাফ-১ ও নাসের, যেগুলোর কার্যক্ষমতা ৬০-১০০ কিলোমিটার।
  • স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র: আবদালি (২০০ কিমি), গজনবি (৩০০ কিমি), রা’দ (৩৫০ কিমি), বাবর (৭০০ কিমি), শাহীন-১ (৭৫০-১,০০০ কিমি)।
  • মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র: গৌরি-১ (১,৫০০ কিমি), গৌরি-২ (২,০০০ কিমি), আবাবিল (২,২০০ কিমি), শাহীন-২ ও শাহীন-৩ (২,৫০০–২,৭৫০ কিমি)।
    আবাবিল ও শাহীন-৩ বহুমুখী ওয়ারহেড বহনে সক্ষম, যা প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম।

ভারতের আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা

ভারত বর্তমানে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে পাকিস্তানের তুলনায় বেশ এগিয়ে। দেশটি নিজস্ব প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় স্বল্প, মধ্যম এবং দূরপাল্লার বহু ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে।

  • পৃথ্বী সিরিজ: ২৫০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্র।
  • অগ্নি সিরিজ: অগ্নি-১ থেকে অগ্নি-৫ পর্যন্ত, যার মধ্যে অগ্নি-৫ একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (৭,০০০–৮,০০০ কিমি)।
  • ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র: নির্ভয়া ও ব্রহ্মোস (সুপারসনিক), যেগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম।
  • নৌবাহিনী ও সাবমেরিনভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র: ধনুষ (জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য), কে-১৫/বি-০৫ সাগরিকা ও শৌর্য (সাবমেরিনভিত্তিক), রেঞ্জ ৭০০ কিমি।
  • হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র: ২০২৪ সালে ভারত সফলভাবে একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, যার রেঞ্জ দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি এবং এটি স্থল, জল ও আকাশপথ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির পাঁচগুণ বেগে চলে, যা প্রায় সবধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিতে পারে।

সম্ভাব্য যুদ্ধ ও আঞ্চলিক পরিণতি

যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয় এবং দুই দেশ তাদের আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার ব্যবহার শুরু করে, তবে এটি শুধু দুই দেশের জন্যই নয় বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হবে এক ভয়ংকর বিপর্যয়ের কারণ। পরমাণু অস্ত্রধারী দেশগুলোর এমন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করতে পারে।

সূত্রঃ কালবেলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *