শেখ হাসিনার হলফনামায় অসঙ্গতি, ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইসিকে দুদকের চিঠি

শেখ হাসিনার হলফনামায় গরমিল, ইসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুদকের চিঠি

২০০৮ সালের নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাখিল করা হলফনামায় সম্পদের হিসাব ও আয়কর বিবরণীর মধ্যে গরমিল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

তিনি জানান, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর আওতায় হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করা হয়েছে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, দুটি পর্যায়ে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। একটি অংশ নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন, যেখানে হলফনামার তথ্য যাচাই করে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে। অন্যদিকে, দুদক নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে সম্পদ বিবরণী ও আয়কর নথি বিশ্লেষণ করে পৃথক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

দুদক প্রধানের ভাষায়, ‘নির্বাচন কমিশনে একরকম হলফনামা দেওয়া হচ্ছে, আর দুদকে সম্পদের হিসাব দেওয়া হচ্ছে অন্যভাবে। এটা রাজনৈতিক ইস্যু নয়—আমরা গত ছয় মাস দায়িত্ব পালনকালে কোনো রাজনৈতিক চাপ পাইনি।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন। সেই তথ্য এবং ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর নির্বাচনের আগে ইসিতে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেখ হাসিনা হলফনামায় নিজ নামে ৬.৫০ একর কৃষিজমির তথ্য দিয়েছেন, যার মূল্য উল্লেখ ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু দুদকে দেওয়া বিবরণীতে তার নামে ২৮.৪১১ একর জমির কথা বলা হয়েছে, যার ক্রয়মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা।

ফলে হলফনামায় ২১.৯১ একর জমির তথ্য গোপন এবং প্রায় ৩২ লাখ টাকার সম্পদ কম দেখানো হয়েছে বলে দুদকের দাবি।

এছাড়া, আরও একটি গুরুতর অভিযোগ সামনে এনেছে দুদক। সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির কোটায় শেখ হাসিনা বেনামে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করেন। এর মূল্য ছিল প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা)। গাড়িটি নিবন্ধন করা হয় সুধা সদনের ঠিকানায় এবং সেটি তিনি নিজেই ব্যবহার করেছেন। অথচ সিরাজুল আকবরের আয়কর রেকর্ড কিংবা হলফনামায় এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।

এই প্রেক্ষিতে, দুদক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর আওতায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে।

এর পাশাপাশি, গত ১৮ মে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন করে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল এ অনুসন্ধানে কাজ করছে।

পূর্বে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতি, বিদেশে অর্থ পাচার ও বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ লুটপাটের অভিযোগেও অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় চার্জশিট দাখিলের পর আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

চার্জশিটে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার নাম রয়েছে।

এ ছাড়া, দেশের বিমানবন্দর উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগেও শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং সাবেক সচিব মোকাম্মেল হকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতিমধ্যে তলব করা হয়েছে।

সূত্রঃ  একুশে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *