ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বক্তব্য প্রদান করছেন। ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তার বক্তব্য প্রকাশ করেন, যা দেশে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ওইদিন রাতে সাধারণ জনগণ ক্ষোভে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে দেন।
তার এই বক্তব্যের পর ঢাকা ও দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত দূতাবাসে তলব-পাল্টা তলব হয়। এমন পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে ওমানের রাজধানী মাস্কটে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। ভারতের মাটিতে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রভাব দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে কীভাবে পড়বে, তা এখন মূল আলোচনার বিষয়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি মাস্কটে অনুষ্ঠিত হবে ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্স, যেখানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দেবেন। কনফারেন্সের ফাঁকে উভয়পক্ষ বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছে। জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে শেখ হাসিনাকে ‘ফুল স্টপ’ করার বার্তা দেবেন তৌহিদ হোসেন, যাতে তিনি ভারতের মাটিতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেন এবং দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি না হয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক রফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না। ৫ ফেব্রুয়ারির তার বক্তব্যের পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের মন্তব্য অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।
অন্যদিকে, একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শেখ হাসিনাকে থামানোর পাশাপাশি প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানাতে পারেন। এছাড়া, সীমান্ত, ভিসা, তিস্তা ও গঙ্গা চুক্তির নবায়নসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পেতে বাংলাদেশ কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, যদি কাজ না হয়, তবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, গত বৃহস্পতিবার ভারতে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করা হয়, এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তারা ভারতকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছেন যে, শেখ হাসিনাকে সংযত করার জন্য, যাতে তিনি বাংলাদেশ বিরোধী কোনো বক্তব্য না দেন।
মাস্কটে ইন্ডিয়ান ওশেন কনফারেন্সের ফাঁকে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। এছাড়া কনফারেন্সে যোগ দেওয়া অন্যান্য দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে তার।