যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা, ভারতের পক্ষ থেকে অস্বীকৃতি

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমনে ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে মতবিরোধ

সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা ঘিরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান ট্রাম্পকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও, ভারত এমন ভূমিকাকে সাফ অস্বীকার করেছে।

১১ মে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর গোলাগুলির পর হঠাৎ করেই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। এর আগে পেহেলগামে হামলা ও ভারতের কথিত প্রতিশোধমূলক অভিযানে অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা চরমে ওঠে, এমনকি পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কাও দেখা দেয়।

এই প্রেক্ষাপটে করাচিতে এক বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, “ট্রাম্প হচ্ছেন শান্তিপ্রিয় নেতা। তার প্রশাসন আন্তরিকভাবে এই সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে এসেছে এবং যুদ্ধবিরতিতে গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছে।”

এদিকে হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা একটি ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধ থামাতে পেরেছি, যেখানে লাখো মানুষ প্রাণ হারাতে পারত। এতে আমরা গর্বিত।”

কিন্তু ভারতের বক্তব্য একেবারেই আলাদা। দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে স্পষ্টভাবে জানান, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ছিল পুরোপুরি ভারত-পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ এবং দ্বিপাক্ষিক বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষ এতে জড়িত ছিল না।

তিনি আরও দাবি করেন, পাকিস্তান থেকে কোনো সরাসরি পারমাণবিক হুমকি পাওয়া যায়নি এবং ভারতের পদক্ষেপ ছিল একান্তই জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার প্রয়াস। তবে কাশ্মীর ইস্যু ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্প একাধিকবার মন্তব্য করলেও ভারত সরকারের নিরবতা নিয়ে সংসদ সদস্যদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এতে বিবৃতির নিয়ন্ত্রণ মার্কিন প্রশাসনের হাতে চলে যাচ্ছে।

৫ ও ৬ মে রাতে ভারত ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ চালিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একাধিক স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে, যেখানে বেসামরিক নাগরিক ও সামরিক সদস্য হতাহত হন। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান চালায় ‘অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুস’, যেখানে নির্দিষ্ট ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়। পাকিস্তান এটিকে ‘সুনির্দিষ্ট ও আত্মরক্ষামূলক’ প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

এই পাল্টাপাল্টি হামলার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কূটনৈতিক চেষ্টায় যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে উপনীত হয় দুই দেশ। তবে এই শান্তি উদ্যোগের কৃতিত্ব কে পাবে—সেটিই এখন নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সূত্রঃ কালবেলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *