মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনা ও কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক আসামি হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আসন্ন ২৪ জুনের মধ্যে তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ.এস.এম. রুহুল ইমরান স্বাক্ষর করে প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাজির না হলে অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য পরিচালিত হবে।
এর আগে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নির্দেশক্রমে এ বিজ্ঞপ্তি একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়, যা আজ মঙ্গলবার যথাক্রমে প্রকাশিত হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, “গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সত্ত্বেও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল এখনো পলাতক বা আত্মগোপনে রয়েছেন। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিধি অনুযায়ী তাদের আগামী ২৪ জুনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। ব্যর্থ হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে।”
মামলার অপর অভিযুক্ত, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ইতোমধ্যে আদালতে হাজির হয়েছেন। তবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামাল পলাতক থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
এই প্রেক্ষাপটে ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ৩১ নম্বর বিধির আওতায় পরবর্তী নির্দেশনার আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় এবং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়।
এই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল গত ১ জুন চার্জ আমলে নেয়। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সাবেক আইজিপি মামুনের বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত।
চার্জ গঠনের শুনানি বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়। নতুন করে গঠিত ট্রাইব্যুনালে দাখিল হওয়া প্রথম মামলাটিই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, যা ‘মিস কেস’ হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলার পাশাপাশি আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একটি মামলায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে প্রাণহানির ঘটনায় দায়ের হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে সরকার, দলীয় ক্যাডার এবং অনুগত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে যে সহিংসতা চালায়, তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভাষায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এসব অভিযোগের বিচার এখন চলছে ট্রাইব্যুনালে, যা জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পর্ব হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে।
সূত্রঃ একুশে