নির্বাচনের রোডম্যাপ না এলে রাজপথে নামার ইঙ্গিত বিএনপির
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্ধারিত রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। তবে দাবি পূরণে দেরি হলে আন্দোলনের পথেই ফিরতে পারে দলটি—সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যদিও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি।
দলটির মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে—নির্বাচন নির্ধারিত সময় ডিসেম্বরের মধ্যে আদৌ হবে কি না, কিংবা সরকার আদৌ রোডম্যাপ প্রকাশ করবে কি না, তা নিয়ে। বিএনপির নেতারা বলছেন, তারা এখনো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সরকারকে সময় দিচ্ছেন। তবে ঈদুল আজহার পর যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সরকার ‘টালবাহানা’ করছে এবং বারবার সংস্কারের প্রসঙ্গ তুলে সময়ক্ষেপণ করছে। এক নেতার ভাষায়, “সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তাই প্রয়োজন হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমাদের আবার রাজপথে ফিরতে হতে পারে।”
গত শনিবার লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এনডিএমের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি বলেন, “সরকার যেন পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করে। জনগণের ভোটে সরকার গঠনের পথ না খুললে স্বৈরাচারকে প্রতিহত করা কঠিন হবে।”
এদিকে খুলনায় তারুণ্যের অধিকার সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ একটাই—সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। সেটা ডিসেম্বরের মধ্যেই দিতে হবে। নির্বাচনের প্রশ্নে যদি দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে তা হবে জনগণের সঙ্গে সংঘর্ষের রূপ।”
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “আমরা ধৈর্য ধরছি তারেক রহমানের আহ্বানে, কিন্তু সেই ধৈর্যের ফল যদি হয় নির্বাচন বিলম্ব, তাহলে রাজপথে নামতেই হবে। তখন আমাদের আর কেউ আটকে রাখতে পারবে না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এই সরকার একটি অন্তর্বর্তী সরকার হয়েও আচরণ করছে যেন তারা নির্বাচিত সরকার। নয় মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়নি। এতে স্পষ্টতই সংকট বাড়ছে, জাতি গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।”
দলটি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের অনীহা, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা, এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি—এসব মিলিয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। বিএনপির নেতাদের মতে, দেশের বিভিন্ন অংশে অসন্তোষ বাড়ছে এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের সরকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পক্ষ নানা কৌশল নিচ্ছে, যা আরও জটিলতা তৈরি করছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনই এখন সংকট সমাধানের একমাত্র পথ। সরকার যদি সেই পথও অবরুদ্ধ করে রাখে, তাহলে রাজনৈতিক চাপ বাড়ানো ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
সূত্রঃ কালবেলা