বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অন্তত ৫২ জন – এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতা
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ঢাকার জনবহুল যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জনের মৃত্যুর বিষয়টি উঠে এসেছে বিবিসি আই’র এক বিশেষ অনুসন্ধানে। প্রতিবেদনটিতে এই ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়ংকর পুলিশি দমন-পীড়ন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বুধবার (৯ জুলাই) প্রকাশিত ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন ছিল সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩৬তম দিন এবং সেদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
এই রক্তক্ষয়ী ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে বিবিসি বিশ্লেষণ করেছে সেদিনের শত শত ভিডিও ও ছবি, কথা বলেছে প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এবং সরেজমিনে তদন্ত চালিয়েছে যাত্রাবাড়ী এলাকায়।
যদিও জাতিসংঘসহ নানা গণমাধ্যমে ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, তবে বিবিসির অনুসন্ধানেই প্রথমবার বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল এবং কতজন নিহত হন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় কিছু পুলিশ সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও অপেশাদার আচরণে জড়িত ছিলেন।”
প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ফুটেজের কথাও উল্লেখ করা হয়, যা আন্দোলনকারী মিরাজ হোসেন তার মোবাইলে ধারণ করেন। ভিডিওতে গুলিবর্ষণের শুরুর মুহূর্ত এবং মিরাজের মৃত্যুর দৃশ্যও ধরা পড়ে। তার পরিবার পরে মোবাইলটি উদ্ধার করে বিবিসিকে দেয়।
ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেদিন দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। প্রথমে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও পরে তারা সরে গেলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে হঠাৎ গুলি চালায়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালানোর চেষ্টা করছেন এবং আহতদের ওপর পুলিশ লাথি মারছে।
বিবিসির ড্রোন ভিডিও বিশ্লেষণে জানা যায়, বিকেল ৩টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত গুলি চালানো হয়। পরে অনেককে আশ্রয় নিতে দেখা যায় পাশের একটি অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে।
প্রথমে ৩০ জন নিহতের খবর জানা গেলেও, সংবাদ প্রতিবেদন, হাসপাতালের নথি, সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ও নিহতদের পরিবারের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বিবিসি নিশ্চিত করেছে যে, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা অন্তত ৫২।
সূত্রঃ একুশে