“মাতৃত্বের যাত্রায় কাঞ্চনের সঙ্গে অসম্ভব প্রেমের গল্প”
আমার জীবনে কাঞ্চনের প্রতি সব সময়ই গভীর প্রেম ছিল, তবে তিনি অন্য সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। কাঞ্চন কখনও তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেনি। প্রথমে আমি ভাবিনি যে একদিন তার সন্তানের মা হতে পারব। কিন্তু যখন প্রথম আলট্রাসোনোগ্রাফি করালাম, তখন দেখলাম একটি ছোট্ট বিন্দু। পরবর্তী সময়ে প্রতি তিন মাসে সে বিন্দু একটু একটু করে বড় হতে দেখে আমি আশ্বস্ত হতে শুরু করি। আজ সে মেয়েটি চোখ মেলে তাকাচ্ছে, বাবার গলা শুনলেই তার দিকে তাকায়—এটা এক অদ্ভুত এবং অসাধারণ অনুভূতি।
মা হওয়ার মাধ্যমে আমি জীবনের এক পূর্ণতা অনুভব করেছি। মাতৃত্ব এমন এক অভিজ্ঞতা যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সবকিছু ঈশ্বরের হাতে। আমি এবং কাঞ্চন, দুজনেই ছোট ছোট শিশুদের খুব ভালোবাসি। কাঞ্চনের আমার দিদির ছোট মেয়ের সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্ব। প্রথম প্রথম, যখন আমি মেয়েকে দেখলাম, মনে হচ্ছিল সে পুতুল। প্রথমবার তাকে দেখে আমি শুধু ‘হ্যালো’ বললাম, কিন্তু কাঞ্চন পাশ থেকে বললেন, “এটা তোর মেয়ে, তুই তো মা!” সেই সময়ে আমি পুরোপুরি আনন্দিত হতে পারিনি, মনে হচ্ছিল সব কিছু ঠিকঠাক হবে তো!
চিকিৎসকরা আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, এবং পাঁচ মাস পর থেকে আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারি, যখন দেখলাম বাচ্চা ঠিকমতো বাড়ছে। তবে শেষদিকে কিছু শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়েছিল, এমনকি জন্ডিসও ধরা পড়েছিল। রাতে ঘুমোতে পারতাম না, তবে যখন মেয়ের মুখ দেখলাম, সব কষ্ট যেন তলিয়ে গেল। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে কাঞ্চন আমার সঙ্গে ছিল, এবং চিকিৎসক জানালেন যে, আমি একটি সুস্থ কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছি। এরপরই সে ছোট্ট প্রাণটি কান্না শুরু করল। আমি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, যে আমি নিজেই এমন একটি প্রাণ সৃষ্টি করেছি।
তবে, মেয়ের জন্মের সঙ্গে কিছু বিতর্কও এসেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কত মাসে সন্তানের জন্ম দিয়েছি। তবে আমি সে বিষয়ে কোনো জবাব দিতে চাই না। কাঞ্চন এবং আমি মিলিতভাবে মা-বাবা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এবং সেটা বাস্তবায়িত হয়েছে। চিকিৎসক আগেই সতর্ক করেছিলেন, এই যাত্রা সহজ হবে না, কিন্তু আমি মা হতে চেয়েছিলাম এবং সময় নষ্ট করতে চাইনি।
আমরা বহুদিন একসঙ্গে ঘুরেছি, একসঙ্গে সময় কাটিয়েছি এবং একসঙ্গে বাড়িতেও থাকি। তবে এক সময়, আমি চাইছিলাম একটি ছোট্ট প্রাণ আমাদের মধ্যে খেলা করুক। আমি কখনও মধুচন্দ্রিমায় যেতে পারিনি, কারণ কাঞ্চনের সময়ই ছিল না। আমাদের ইউরোপ যাওয়ার কথা ছিল, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে মলদ্বীপে গিয়ে আমরা সময় কাটিয়েছি। চিকিৎসক বলেছিলেন, “মধুচন্দ্রিমায় যেতে পারেননি, তাহলে ‘বেবিমুন’-এ চলে যান।”
শিশুর জন্মের সময়, চিকিৎসক আমাকে জানিয়েছিলেন, ১৭ নভেম্বর আমার সন্তান আসবে, এবং সেটা কাঞ্চনের বাবার জন্মদিনের সঙ্গেই মিলে যায়। আমি দারুণ আনন্দিত ছিলাম, কিন্তু মেয়েটি কালীপুজোর পরেই জন্ম নিল। তার জন্মের পর কাঞ্চনকে আমি ‘সেরা বাবা’ বলব। আমি তাকে প্রেমিক বা স্বামী হিসেবে খুব বেশি সময় পাইনি, তবে ১২ বছর তাকে চিনি, যার মধ্যে ৮ বছর সম্পর্কের কোনো কিছু ছিল না। তবুও, আমার তরফ থেকে সব সময়ই অসম্ভব প্রেম ছিল কাঞ্চনের প্রতি। কাঞ্চন কখনও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেনি, তাই আমাকে কখনও বলেছে না যে, আমাকে ভালোবাসে।
আমার দুর্বলতা ছিল—আমি বিবাহিত এক পুরুষকে ভালোবেসেছিলাম। এ নিয়ে অনেকেই কটাক্ষ করতে পারেন। তারা প্রশ্ন তুলতে পারেন, আমি কি বিবাহিত জীবনে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করি? তবে, আমি বলব না, কারণ আমি এমন মানুষ নই যে শুধু নিজের লাভ চিন্তা করি। আমি চাই, আমার পরিবারের সবাই সুখী থাকুক। আমাদের সম্পর্কে কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না—কিন্তু কাঞ্চন খুশি থাকলেই আমি খুশি। সেজন্য হয়তো এত বছর পর আমাদের সম্পর্ক পরিণতি পেয়েছে। বিয়ের প্রস্তাবটা কাঞ্চনের তরফ থেকে এসেছিল। আমি কখনও ভাবিনি, আমি তার স্ত্রীর মতো হব, বা তার সন্তানের মা হব।
কাঞ্চন এক দারুণ বাবা। রাতের পর রাত সে মেয়ের জন্য জেগে থাকে, সকাল হলে আমি উঠার আগে সে উঠে যায়, মেয়েকে খাওয়ায়, যত্ন নেয়—সব কিছুই তার দায়িত্ব। মেয়েটি এখন বাবাকে চিনেছে। তার গলা শুনলেই চোখ তুলে তাকায়। কাঞ্চন তাকে ‘সোনামা’ বলে ডাকলে, সে আবার তার দিকে তাকায়।
এখন আমি খুব ভালো আছি, কারও ক্ষতি করিনি, আর হয়তো ঈশ্বরের আশীর্বাদও পেয়েছি। কাঞ্চন আমাকে তার জীবনে স্বীকৃতি দিয়েছে, আর আমি মা হতে পেরে দারুণ আনন্দিত। আমার শ্বশুরবাড়িও খুব ভালো, আমি সত্যিই ধন্য। এই মাতৃত্বের সফর আমি পুরোপুরি উপভোগ করেছি, এবং ফোটোশুটও করেছি, যাতে আমার সন্তান বড় হয়ে তার শিকড় জানতে পারে এবং বুঝতে পারে তার বাবা-মা কেমন ছিলেন।