ফেনীতে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি, প্রস্তুত ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বৃষ্টির কারণে ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। দুর্গতদের আশ্রয় দিতে জেলায় ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষও (কন্ট্রোল রুম) খোলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে সরিয়ে নিতে ফুলগাজী, পরশুরাম ও সদর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা হয়েছে। দুর্গতদের সহায়তায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১২০ মেট্রিক টন চাল।
উপজেলা অনুযায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর সংখ্যা হচ্ছে—ফুলগাজীতে ৯৯টি, পরশুরামে ৩২টি এবং সদরে ২২টি। দুর্যোগ মোকাবিলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ পর্যন্ত ৪৮টি পরিবারের ১৩৩ জন মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন, যাদের মধ্যে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৫৪৭ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান রাতেই ফুলগাজী ও পরশুরামের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের পানির চাপে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর অন্তত ১০টি পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পড়েছে। ফলে ফুলগাজী ও পরশুরামের বেশ কয়েকটি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নদীপারের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
মুহুরী নদী পরশুরাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩.৩৪ মিটার ওপরে এবং সিলোনিয়া নদী সুবারবাজার পয়েন্টে ১০.৭৮ মিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই অতিবৃষ্টি প্রায় ১২০ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে ১২ জুলাইয়ের পর।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টা খোলা একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ০১৮৯৮৪৪৪৫০০ ও ০১৩৩৬৫৮৬৬৯৩ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি।
সূত্রঃ কালবেলা