টানা বর্ষণে দেশের ২১ জেলায় প্রায় ৭২ হাজার হেক্টর কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

টানা বৃষ্টিতে উপকূলীয় ২১ জেলায় তলিয়ে গেছে প্রায় ৭২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি

দেশজুড়ে সক্রিয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা, যার ফলে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ২১টি জেলায় মোট ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির ফসল বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে আউশ ধান। প্রায় ৪৪ হাজার ৬৬২ হেক্টর আউশ জমি ডুবে গেছে পানিতে। এরপরেই রয়েছে আমন বীজতলা—যার প্রায় ১৪ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমি নিমজ্জিত।

এছাড়া ক্ষতির তালিকায় রয়েছে:

  • ৯,৬৭৩ হেক্টর শাকসবজি
  • ২৯৭ হেক্টর বোনা আমন
  • ১৩৫ হেক্টর পাট
  • ৩৮৭ হেক্টর পান
  • ২৯৩ হেক্টর পেঁপে
  • ১১৪ হেক্টর কলা
  • ২৮১ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন তরমুজ
  • ১০৪ হেক্টর মরিচ

জেলার ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কুমিল্লায়, যেখানে ১১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এরপরেই রয়েছে নোয়াখালী (৭,৮০৬ হেক্টর) এবং ফেনী (১,৬৫৫ হেক্টর)।

উল্লেখযোগ্যভাবে, উপকূলীয় অঞ্চলের পাশাপাশি কিছু অভ্যন্তরীণ জেলাতেও অস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা আশাবাদ প্রকাশ করেছেন যে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কিছুটা কমে এসেছে, যার ফলে পানিতে ডুবে থাকা জমির পরিমাণও ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানান, মাঠপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ও ফসলের ধরন চিহ্নিতকরণে কাজ চলছে। ক্ষতির চূড়ান্ত মূল্যায়নের পর প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, জুন মাসের শেষ দিক থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলগুলোতে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। মৌসুমি লঘুচাপের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় অনেক জায়গায় শিকড় পচে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিশেষ করে আমন বীজতলা যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে এর প্রভাব পড়বে আসন্ন মৌসুমের আবাদে। ফলে উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

সরকার পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

সূত্রঃ একুশে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *