দুর্নীতির সুত্র পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয় দুদক

সাড়ে চার মাসে ৩৫৯ অভিযান: দুর্নীতি দমনে জোরালো অবস্থানে দুদক

দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে একযোগে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র সাড়ে চার মাসের মধ্যেই সারা দেশে ৩৫৯টি অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি। বিআরটিএ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, এলজিইডি, বিসিবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবামূলক সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত এসব অভিযান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

গত ৬ মে, ৩৫টি জেলা কার্যালয়কে হঠাৎ অভিযানের প্রস্তুতি নিতে বলে দুদক। পরদিন ৭ মে, বিআরটিএর ৩৫টি কার্যালয়ে একযোগে অভিযান চালানো হয়। এতে দালালচক্র ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশ, ঘুষ লেনদেনসহ নানান অনিয়মের প্রমাণ মেলে। যশোর, শেরপুর, বরিশাল, বাগেরহাট, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় দালাল গ্রেপ্তার, জরিমানা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এর আগে, ১৬ এপ্রিল দেশের ৩৫টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পরিচালিত অভিযানে ঘুষ বাণিজ্য, অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও রেজিস্ট্রেশনের নামে হয়রানির বিস্তর প্রমাণ পায় দুদক। দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, সিলেট ও যশোরে নকলনবিশ, অফিস সহকারীসহ একাধিক কর্মচারীর কাছ থেকে ঘুষের অর্থ উদ্ধার হয়।

এছাড়া ২৯ এপ্রিল এলজিইডির ৩৬টি কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। বিগত চার মাসে বিসিবি, নগদ, সিটি করপোরেশন, রাজউক, পাসপোর্ট অফিস, তিতাস গ্যাস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে অভিযান চালায় দুদক।

কমিশনের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দুদকে寄 ৭,১২৭টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ৪২৪টি অভিযোগ এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে পাঠানো হয় এবং বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া আরও ২৮৬টি অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় অভিযান।

এই সময়কালে ফাঁদ মামলা হয়েছে ৩টি, যেগুলোতে ঘুষের অর্থসহ দুর্নীতিবাজদের হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। অভিযানের তথ্য বিশ্লেষণ করে ১৪টি মামলা রুজু এবং ৫৬টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৭৭টি এবং বিভিন্ন দপ্তরে ৩৪৪টি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালে দুদকের মোট অভিযান ছিল ৫২৪টি। সেই তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথম সাড়ে চার মাসেই ৩৫৯টি অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি।

দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ বলেন, আমাদের অভিযানগুলো মূলত জনগণের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি ও অতিরিক্ত ব্যয় বন্ধে পরিচালিত হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি এখন শুধুমাত্র সরকারি অফিসে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সমাজের গভীরে ঢুকে গেছে। দেশবাসীর সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই, ছোট-বড় সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

সূত্রঃ কালবেলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *