বাংলাদেশের মানসম্পন্ন পণ্যের চাহিদা রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল ও ভুটানে, তবে ভারত শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রস্তুত নয়। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার নিয়েও নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতা নেই। ভারতের এ অনীহায় ‘সার্ক’ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। – অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম, ‘সেভেন সিস্টার্স’ অঞ্চলের বাণিজ্য সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য

ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চল, যা ভূমিবেষ্টিত (ল্যান্ড লকড) একটি এলাকা। এই অঞ্চলে ভারতের সাতটি রাজ্য— আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড ও মনিপুর— অবস্থিত, যেগুলো collectively “দি সেভেন সিস্টার্স” নামে পরিচিত। যদিও এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের নিকটবর্তী, তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। এখানকার জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়নি এবং বেশিরভাগ সময়েই এটি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এর ফলে, বাংলাদেশের পণ্যসমগ্রী এই অঞ্চলে প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি করেছে, এবং বাংলাদেশ এখানকার বাজারে ব্যাপক সম্ভাবনার মুখোমুখি।

এই অঞ্চলের মানুষ সহজে সুলভে বাংলাদেশের পণ্য কিনতে সক্ষম হবে, এবং এটি শুধু বাংলাদেশই লাভবান করবে না, বরং উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে। এই অঞ্চলটির প্রায় আট কোটি মানুষ অত্যন্ত লাভবান হতে পারে। বাংলাদেশি পণ্য যেমন: সিমেন্ট, স্টিল, আয়রন, তৈরি পোশাক, ভোজ্যতেল, ওষুধ, ইলেকট্রনিকস, প্লাস্টিক পণ্য, আসবাবপত্র, শাড়ি, শুঁটকি, মাছ, খেলনা, সেবা পণ্য ইত্যাদির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এই অঞ্চলে।

একসময়, পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য যেমন রহিম আফরোজ কোম্পানির ব্যাটারি, কেয়া কসমেটিক্স, প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির পণ্য ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়েছিল, কিন্তু এরপর ভারতের সরকারি নীতিমালা ও শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দ্বারা বাংলাদেশের পণ্য রফতানি অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ভারত জানে যে, উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, তবে নানা কৌশলে বাংলাদেশের পণ্য সেখানকার বাজারে প্রবেশ ঠেকানো হচ্ছে।

এছাড়া, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সাথে ভারতের ট্রানজিট-করিডোর চুক্তি অনুযায়ী, ভারত একতরফাভাবে সুবিধা প্রদান করেছে, ফলে বাংলাদেশের পণ্য উত্তর-পূর্ব ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অবাধে চলাচল করতে পারছে না। তবে, বাংলাদেশ যদি ভারতীয় সহযোগিতা পায়, তাহলে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

বর্তমানে, বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো— চট্টগ্রাম ও মোংলা— নেপাল ও ভুটানসহ বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশে বাজার প্রবৃদ্ধির জন্য অপার সুযোগ প্রদান করতে পারে। তবে, ভারতের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, বিশেষ করে শিলিগুড়ি-ফুলবাড়ী ‘চিকেন নেক’ করিডোর ব্যবহারে। এই ২২ কিলোমিটার সড়কপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন সহজ হতে পারে, তবে ভারতের সহযোগিতা না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যাপক হলেও ভারত শুল্ক-অশুল্ক বাধা সরাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভারত আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাধা দিচ্ছে এবং ‘সার্ক’ এর কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করছে না, যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *