অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছেন, “আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য স্বাগত জানানো হবে, তবে এর আগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিচার নিশ্চিত করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “যদি তারা অপরাধী প্রমাণিত না হয়, তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। অপরাধী নয় এমন ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতো স্বাধীনভাবে যোগ দিতে পারবেন। আমরা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করব।”
টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কে কথা বলেন এবং বলেন, “এই আন্দোলনে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। গত ১৫ বছরে হাসিনা সরকার ৩,০০০ জনকে গুম করেছে। এছাড়া হত্যা, গুম এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে।”
শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “তিনি ভারতে বসে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, যা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহিংসতার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার প্রেক্ষিতে তাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে, তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হয়তো তাতে রাজি হবেন না।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, “আমরা বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্বস্ত করতে চাই যে বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য খোলা রয়েছে।” তিনি বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য ছয়টি সংস্কার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন, যার মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি প্রশাসন এবং সংবিধান সংশোধন অন্তর্ভুক্ত।
ড. ইউনূস টাইম ম্যাগাজিনকে জানান, আওয়ামী লীগের পাচার করা হাজার কোটি ডলার উদ্ধারের জন্য তিনি কাজ করবেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘ব্লক মেকানিজম’ শেয়ার করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা প্রতিটি দেশকে এসব অর্থ ফেরত পেতে সহায়তা করবে।
বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যা স্বৈরাচারী শাসনের লক্ষণ।” তিনি দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটি সময়সীমা এবং রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানান।
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না জানিয়ে বলেন, “আমরা আগে রেললাইনগুলো ঠিক করতে চাই, যাতে ট্রেন সঠিক পথে চলে।” তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার কথা বলেন, যা স্বৈরাচারের ফিরে আসা রোধ করতে সহায়ক হবে। “এ কারণেই আমরা বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে এই প্রক্রিয়াকে বাংলাদেশ ২.০ বলছি,” বলেন তিনি।