শৃঙ্খলা ভাঙলে ছাড় নয়: বিএনপির হুঁশিয়ারি

শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর বার্তা দিলেন তারেক রহমান, দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিএনপির কঠিন অবস্থান

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় আবারও কঠোর বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার (১৭ জুন) রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ বার্তা দেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালায় টকশোতে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী দলীয় নেতা ও পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক ‘লন্ডন বৈঠক’-এর পর সরকারের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনী আলোচনা এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা দেন। কর্মশালায় তিনি বলেন, “কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যেই হোক, অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।”

ইতোমধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও নরসিংদীর পলাশে দলীয় কোন্দলের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কালিয়াকৈরের ঘটনায় দুই নেতাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কার ছাড়াও অনেকের পদ স্থগিত বা পদাবনমন করা হয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও গৃহীত হয়েছে।

বিতর্কিত মন্তব্যে সতর্ক বার্তা

সম্প্রতি বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও শামসুজ্জামান দুদুকে লিখিতভাবে সতর্ক করেছে বিএনপি। তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেন, দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের কোনো ছাড় নেই। আমরা মাস্তানি বা দখলবাজির রাজনীতি করি না।

জনগণের প্রত্যাশা ও দলের দায়িত্ব

তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ নেই বলে ধরে নিয়ে কেউ যেন মনে না করে, ক্ষমতা আপনাআপনি আমাদের হাতে আসবে। ভোটে জয় পেতে হলে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভোটকে ভোট হিসেবেই নিতে হবে, প্রতিটি ভোটারকে বিশ্বাস করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম-খুন, অর্থপাচার ও দুর্নীতির বিচার হবে। প্রথম ১৮০ দিনের জন্য একটি অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার আওতায় এক কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। ২০৩৪ সালের মধ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।”

অর্থনীতির দুরবস্থা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা

কর্মশালায় অংশ নেওয়া পেশাজীবীরা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। বিনিয়োগ কমছে, গার্মেন্টস খাত ধুঁকছে, কর্মসংস্থান কমেছে। তারা জানান, গত এক বছরে প্রায় এক লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এই সংকট মোকাবেলায় বিএনপির করণীয় নিয়ে কর্মশালায় বিশদ আলোচনা হয়।

সতর্কতার বার্তা ও পরামর্শ

তারেক রহমান বলেন, কালিয়াকৈরের সংঘর্ষের ঘটনায় আমি দুঃখিত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। এটি বিএনপির ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এমন ঘটনা আর সহ্য করা হবে না।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা নির্বাচনের স্থিতিশীল পরিবেশ চায় না, তাদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ

কর্মশালায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, রুমিন ফারহানা, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও সাংবাদিক এমএ আজিজসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রঃ আমার দেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *