প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিসিএসের স্বপ্ন পূরণ করলেন উল্লাস পাল

প্রতিবন্ধকতা নয়, সম্ভাবনার নাম উল্লাস পাল

জন্ম থেকেই শারীরিক সীমাবদ্ধতা ছিল তার সঙ্গী। কিন্তু উল্লাস পাল কখনো নিজেকে সীমাবদ্ধ ভাবেননি—নিজেকে দেখেছেন এক যোদ্ধা হিসেবে, যিনি জীবনকে জয় করার সংকল্পে অবিচল। কঠিন বাস্তবতা, কষ্টসাধ্য পথ—সব পেরিয়ে আজ তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে। এই জয় শুধু উল্লাসের নয়, এটি সেই সমস্ত তরুণ-তরুণীর প্রতীকী বিজয়, যারা প্রতিকূলতার মাঝেও স্বপ্ন দেখতে জানে।

সংগ্রামের শুরুঃ মাটির ঘ্রাণ আর কাঁধে স্বপ্ন

উল্লাসের শৈশব কেটেছে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামে। বাবা উত্তম কুমার পাল একজন মৃৎশিল্পী, আর মা আন্না রানী পাল একজন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের বড় তিনি। জন্ম থেকেই তার হাত-পা বাঁকা ছিল। হাঁটতে পারেননি স্বাভাবিকভাবে, বাবা কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন। তবুও দমে যাননি উল্লাস।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাঁ হাতে লিখে শুরু হয় তার শিক্ষাজীবন। বর্ষায় স্কুলে যাওয়া ছিল কঠিনতম পরীক্ষা, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ফুটবল খেলতে না পারলেও খেলোয়াড়দের চোখে দেখে অনুপ্রেরণা খুঁজতেন।

একটি একটি ধাপ, দৃঢ়তায় জয়

২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫, এরপর উচ্চমাধ্যমিক ঢাকার নর্দান কলেজে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হয়ে যথাক্রমে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেন। পড়াশোনার প্রতি অদম্য ভালোবাসা এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে চলা এই যাত্রা তাকে প্রস্তুত করে বিসিএস যুদ্ধের জন্য।

৪০তম, ৪১তম, ৪৩তম—এই তিন বিসিএসে একে একে পরীক্ষা দেন উল্লাস। সাফল্য ধরা দিলেও কাঙ্ক্ষিত প্রশাসন ক্যাডার আসেনি। তবুও লক্ষ্যচ্যুত হননি। অবশেষে ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে বাস্তবে রূপ দেন তার স্বপ্ন।

একজন উল্লাস, একটি প্রজন্মের আশা

উল্লাসের প্রতিবেশীরা বলেন, তিনি শিখিয়েছেন—প্রতিবন্ধকতা মানেই থেমে যাওয়া নয়। তার অর্জন প্রমাণ করেছে, প্রতিটি সীমাবদ্ধতার পেছনেই রয়েছে সম্ভাবনার বিশাল দরজা।

তার মা বলেন, ছেলেটা ছোট থেকেই সংগ্রামী। আজ সে যা অর্জন করেছে, তা আমাদের সব কষ্টের প্রতিদান।” বাবা যোগ করেন, “ওকে কখনো দুর্বল ভাবিনি। সাহস দিয়েছি, আজ সেই সাহস ওকে এই জায়গায় এনেছে।

উল্লাসের কণ্ঠে সাহসের বার্তা

যখন বুঝলাম আমি প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছি, চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি,” বলেন উল্লাস। “অনেকে বলেছিল পারব না, কিন্তু আমি বিশ্বাস হারাইনি। আমার স্বপ্ন ছিল, আজ সেটা সত্যি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি শুধু চাই, সরকার যেখানে দায়িত্ব দেবে, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করব। আর চাই, প্রতিবন্ধী মানুষদের যেন করুণা নয়, সম্মান দিয়েই দেখা হয়।

শিক্ষকের চোখে উল্লাস

কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, শারীরিক সমস্যা থাকলেও মেধায় উল্লাস সব সময় অসাধারণ ছিল। আজ সে আমাদের গর্ব।

সূত্রঃ কালবেলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *