এটি কোনো উন্মত্ত জনতা নয়, বরং একটি চাপ সৃষ্টিকারী দল : প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সাংবাদিকদের একটি অংশকে ‘মব’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও তিনি একে ‘প্রেসার গ্রুপ’ হিসেবে দেখছেন। তিনি মনে করেন, এই চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর জন্ম অতীত সাংবাদিকতার ব্যর্থতার ফলাফল।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, প্রেসার গ্রুপ গড়ে ওঠার পেছনে ভিত্তি তৈরি হয়েছে, কারণ তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১৫ বছরে তাদের ন্যূনতম নাগরিক স্বাধীনতাও রক্ষা করা হয়নি। এখন তারা আবার সংগঠিত হচ্ছে, কারণ অতীতে তারা কিছু ‘শীর্ষ সাংবাদিক’-এর কাছ থেকে চরম হুমকি পেয়েছে—যারা সরাসরি ‘গুলি করার’ বা ‘খুন করার’ আহ্বান জানিয়েছিল। এই স্মৃতি থেকেই তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পরিবর্তে সবাই শুধু সরকারের দোষ দিচ্ছেন। সরকার তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করছে, কিন্তু যারা আস্থা হারিয়েছেন, তারা দায় নিচ্ছেন না। নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তারা আবার পজিশন নিচ্ছে—এতে সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন হবে না।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীন, উন্নত দেশগুলোতেও ততটা স্বাধীনতা নেই। এখন বেশিরভাগ মানুষ ভিডিও দেখে সংবাদ গ্রহণ করছে, যেখানে মিথ্যা, অলসতা আর বিভ্রান্তি ভরপুর। কেউ কেউ টকশোতে সারাদিন মিথ্যা বলছে—যা এক ধরনের অপসাংবাদিকতা।

তিনি আরও বলেন, এই ধরনের অপসাংবাদিকতার কারণে সংবাদপত্র পাঠ কমে যাচ্ছে। এখন কেউ আমার বিরুদ্ধে ৪০ মিনিটের ভিডিও বানিয়ে ৩২০টা মিথ্যা তথ্য দিতে পারে—আর আমি প্রতিবাদ করলে বলা হয়, আমি প্রেসার দিচ্ছি, সরকার টার্গেট করছে। এটা তো ন্যায্য নয়।

শফিকুল আলম জার্নালিস্ট প্রটেকশন অর্ডিন্যান্সের পক্ষে কথা বলেন। একইসঙ্গে যেসব ব্যক্তি অপসাংবাদিকতার শিকার হচ্ছেন, তাদের সুরক্ষার কথাও বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, যখন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত হয়, তার স্থায়িত্ব অনন্তকাল। একবার গুগলে ওঠা খবর ভবিষ্যত প্রজন্মও দেখবে। একজন সচিব বা সরকারি কর্মকর্তার নামে মিথ্যা খবর প্রকাশিত হলে, তার কি কোনো প্রতিকার নেই? পশ্চিমা বিশ্বে তো মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণ ও জরিমানার বিধান রয়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রয়োজন রয়েছে।

শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করেন, প্রেসার গ্রুপ নিয়ে আমি যে মন্তব্য করেছি, সেটি সম্পূর্ণভাবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত। এটি সরকারের অবস্থান নয়।

সূত্রঃ একুশে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *