“যদি কোনো রাজনৈতিক দল মানবাধিকার লঙ্ঘন, দলগতভাবে গণহত্যা বা গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ওই রাজনৈতিক দলটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারবে। এ ধরনের একটি আইন যুক্ত করার মাধ্যমে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আইনের খসড়া আগামী বুধবার (২০ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি তার মন্ত্রণালয়ে গত ১০০ দিনে সম্পন্ন কাজের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধন অধ্যাদেশটি আগামীকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে এবং এতে অনুমোদন পেলে কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নিয়োগের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে, যা দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।
আইন উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, ৫ আগস্টের আগে শেখ হাসিনার পালানোর ঘটনাটি উদঘাটন করে বলেন, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে চলে যান এবং এখন ফোনের মাধ্যমে দলের কর্মীদের উসকানি দিচ্ছেন। তার মতে, নেতাকর্মীদের উচিত এই বিষয়ে শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা।
তিনি আরও বলেন, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে, এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনে কথার স্বাধীনতার জন্য যেসব মামলা হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল হবে। তবে হ্যাকিং ও সাইবার অপরাধের মামলা চলবে।
এছাড়া, ৪,৩০০ আইন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। এর মাধ্যমে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার সম্ভব হবে এবং মামলা বাণিজ্য রোধ করা যাবে। তিনি জানিয়েছেন, যেসব ব্যক্তি মামলা বাণিজ্য করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন উপদেষ্টা আরও জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন থেকে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে বিচার পরিচালনা করার সুপারিশ করতে পারবে। এই প্রস্তাবের ওপর উপদেষ্টা পরিষদ আগামী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেবে।
এছাড়া, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে এবং সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চায়।
এদিকে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল জানান, যদি দেশের কোনো আসামি পলাতক থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করা হতে পারে, কারণ বাংলাদেশ ইন্টারপোলের সদস্য।
তিনি আরও বলেন, সরকার আওয়ামী লীগের মতো অযথা দমন-পীড়ন চায় না, তবে বর্তমানে দেশে যে ধরনের অযৌক্তিক আন্দোলন চলছে, তা নানা দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে এবং সরকার এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে। কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।