কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নিজ নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন?

বাংলাদেশে বর্তমানে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর পাশাপাশি, শেখ হাসিনা সরকারের মাধ্যমে আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাস করা হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে। তাছাড়া, তাজউদ্দীন আহমদ এবং জাতীয় চার নেতার অন্যান্য সদস্যদের নামে কতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

এমনকি পৃথিবীর কোন দেশেই জীবিত অবস্থায় এবং ক্ষমতায় থেকে সরকার প্রধান নিজের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে না। বঙ্গবন্ধুর প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা থাকলে শেখ হাসিনা আরও একটি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন, যার নাম বিশ্বজুড়ে পরিচিত হতো। কিন্তু তার পরিবর্তে, তিনি বাবার নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের উদ্দেশ্যে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়, কিন্তু এতে যে শুধুমাত্র রাজনীতি হয়েছে, তা স্পষ্ট। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের মান উন্নত করার কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি, বরং ছাত্রদের দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য চাপ তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক সময় একটি রাজনৈতিক টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেমন—ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান বৃদ্ধির বদলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই বেশিরভাগ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, দেশটির সরকারি ৩৭টি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে ৬টি কলেজের নামও বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাখা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ, ফরিদপুর; শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, টাঙ্গাইল; শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, জামালপুর; শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, হবিগঞ্জ ইত্যাদি। এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য মূলত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা এবং দেশের সাধারণ জনগণকে উপেক্ষা করা।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Source: The Daily Campus

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *