৮ আগস্ট শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। তিনি ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর উল্লেখ করেন এবং দেশের উন্নয়নে সরকারের নানান পদক্ষেপের কথা জানান।
ড. ইউনূস বলেন, “নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে এবং এটি আর থামবে না,” তবে তিনি সতর্ক করেন, নির্বাচনের সঠিক রোডম্যাপ তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্য প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, গুম, খুনসহ সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে এবং এর জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশন ইতোমধ্যে ১৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলোর সংখ্যা ৩৫০০ ছাড়াতে পারে।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, অনেক পুলিশ সদস্য গণহত্যায় অংশ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, তবে তাদের মনোবল পুনরুদ্ধারে চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে দেশের সেনাবাহিনীও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করছে।
ড. ইউনূস সরকারের অর্থনীতি পুনর্গঠনেও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি জানান, গত তিন মাসে তারা প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করেছেন এবং বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের সমঝোতায় বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়াই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের পুনর্বাসন ও চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন ড. ইউনূস। তিনি জানান, শহীদদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হবে এবং যাদের বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন, তাদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভাষণে ড. ইউনূস সরকারের লক্ষ্য ও সংস্কারের অঙ্গীকার প্রকাশ করেন। তিনি আশ্বাস দেন, “নির্বাচনের রোডম্যাপ খুব শীঘ্রই প্রস্তুত হবে, তবে সংস্কারের কাজ সম্পন্ন না হলে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, একত্রিতভাবে ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা ঢাকায় আসবেন এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এছাড়া, তিনি অর্থনীতির পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।
ড. ইউনূস সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা দেশকে ফ্যাসিবাদী শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পারব।”